জগৎ জননী মা দুর্গা, অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তি, পবিত্রতায় ভরিয়ে তোলেন চারিদিক, সেই মা দুর্গা মর্তে আসেন পুজোর কটা দিন, তাকে নিয়ে হই হুল্লোড়, উন্মাদনা, প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকে সকলে। জাতি ধর্ম ভেদাভেদ ভুলে সকলে দুর্গা পুজোয় সামিল হয়, বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজা।
তবে তাঁর মূর্তি তৈরি প্রয়োজন হয় পতিতালয়ের মাটি, পুজোর বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই ব্যস্ততা চোখে পরে কুমোরপাড়ায়, মাটি দিয়ে শিল্পীরা তৈরী করেন মা দুর্গার প্রতিমূর্তি।
তবে মা দুর্গার প্রতিমূর্তি গড়ে তুলতে বিশেষ কিছু জিনিসের প্রয়োজন আছে। যা ছাড়া তৈরী করা যায় না দেবী মায়ের মূর্তি। আবশ্যক জিনিস গুলি হল গাভীর মূত্র, গোবর, ধানের শিস, পবিত্র গঙ্গার জল, নিষিদ্ধপল্লীর মাটি। অতীতকাল থেকেই দেবীর মূর্তি তৈরিতে নিষিদ্ধপল্লীর মাটি আবশ্যক। জেনে নিন এর পেছনের কারণ।
সমাজে তাদের স্থানে একেবারে এক কোনায়, যাঁদের লোকে অবজ্ঞা অপবিত্র বলে মনে করে,যাঁদের জন্য একরাশ ঘৃণা জমিয়ে রাখে মানুষ,যারা কোনোদিন সম্মান তো দূরের কথা, খারাপ দৃষ্টি ছাড়া কিছুই পায়নি। তাঁদের ঘরের মাটি অপরিহার্য দেবীমূর্তি তৈরীতে ৷
পুরুষরা পতিতালয়ে গিয়ে বারাঙ্গনার সাথে ঘনিষ্ঠ হলে মনে করা হয় পুরুষরা পাপ নিয়ে সমস্ত অর্জিত পুন্য রেখে আসে সেখানে।
আসলে মানুষের বিশ্বাস পুরুষের কামনা, বাসনা পতিতারা নিজেদের মধ্যে নিয়ে নিজেদের অশুদ্ধ, অপবিত্র করে, কিন্ত্য সমাজকে শুদ্ধ রাখে। যার কারণে পতিতালয়ের মাটি হয় পবিত্র ৷
নারী ওরসে জন্ম নেয় পুরুষ, নারী পতিতা কিন্তু তাকে পতিতা বানায় পুরুষ, পতিতালয়ের মাটি দিয়ে মায়ের প্রতিমা তৈরী করে বোঝানো হয় সকল নারী পবিত্র, সন্মানের যোগ্য।
শরৎকালে দেবীর অকাল বোধনে মহামায়ার পুজো হয় ৯টি রূপে। যার নবম রূপটি হল পতিতালয়ের প্রতিনিধি ৷ বেশ্যালয়ের মাটি দিয়ে মাতৃমূর্তি তৈরীতে ব্যবহার করার পেছনে এটাও একটা কারণ।