সম্প্রতি আকাশ বাংলার প্রস্তুতি প্লাটফর্ম 8 OTT তে সদ্য মুক্তি পেলো Roll Camera Action এর প্রযোজনায় নির্মিত, এবং সৌভিক মন্ডল পরিচালিত এর এক ভিন্ন ধারার ছবি “সর্ষেফুল“। বলতে গেলে “সর্ষেফুল” এর মাধ্যমে পরিচালক সৌভিক মন্ডল এক অন্যরকম গল্প দর্শকের সামনে উপস্থাপন করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে নতুনত্বের ছোঁয়া| এই ছবিটি আপনারা দেখতে পাবেন Platform 8-এ
এই ছবিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে সোমরাজ, পৃথা সেনগুপ্ত, কৌশিক চ্যাটার্জি, রুমকী চ্যাটার্জি, রানা বসু ঠাকুর, অনন্যা গুহ, শিঞ্জিনী চৌধুরী, দেবব্রত ভট্টাচার্য্য, মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী সহ আরো অনেককে।
ছবির কাহিনী গড়ে উঠেছে সুমন ও ইন্দ্রাণীকে কেন্দ্র করে। সুমন উত্তর কলকাতার মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে, সে M.SC পাশ করেছে ৫-৬ বছর হলো কিন্তু এখনো চাকরি পায়নি। এরই মধ্যে বাবার চাকরি চলে যায়, যা সুমনকে চাকরি খোঁজার তাগিদকে বহুগুণ বাড়াতে বাধ্য করেছে। ৫-৬ বছর ধরে সুমনের দিন শুরু হয় খবরের কাগজের চাকরির পাতায় চোখ রেখে, এপ্লিকেশন করে। দিন, সপ্তাহ কাটে চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে কিন্তু দিনের শেষে যখন সে বাড়ি ফেরে তখন তাকে শুনতে হয় পাশের বাড়ির মেয়েটা বা ছেলেটা চাকরি পেয়েছে। এই দমবন্ধ পরিবেশের মধ্যে সুমনের জীবনে একমাত্র প্রাণ খুলে বেঁচে থাকার জায়গা ইন্দ্রাণীর ভালবাসা।
কলেজে পড়ার সময় কলেজষ্ট্রীটে বই কিনতে গিয়ে তাদের দুজনের প্রথম দেখা হয়, সেখান থেকে আস্তে আস্তে ভালবাসা। এই ভালবাসায় বিশ্বাসটা এতোটা জায়গা নিয়েছে যে “ভালোবাসি” কথাটা কোনদিন কাউকে বলার প্রয়োজন হয়নি। সুমনের বিশ্বাস একমাত্র ইন্দ্রাণী ই অপেক্ষার রাস্তায় একা দাঁড়িয়ে থাকবে আজীবন তার জন্য। কিন্তু বাড়ি থেকে ইন্দ্রাণীর বিয়ের চাপ সেই বিশ্বাসকে টলাতে শুরু করে ধীরে ধীরে।
অনেক ব্যর্থতার পর একটা আশার ক্ষীণ আলো দেখা দিল সুমনের জীবনে। কিন্তু পাকা চাকরির নামে ইন্টারভিউ দিয়েও অসফল হল সুমন আর বেকার সুমনকে কোনভাবেই বাড়ির চাপের সামনে দাঁড় করাতে পারল না ইন্দ্রাণী।
অপেক্ষার পথে সুমন শুধু একা… একদমই একা হয়ে গেলো। জীবন শেষের চরম সিদ্ধান্ত নেওয়ার মুহূর্তেই ঘটল সুমনের জীবনে এক পরিবর্তনের ঘটনা। হঠাৎই তার হাতে এসে হাজির স্বপ্নে দেখা বড় অফিসে বড় POST এর চাকরি।
বাড়িতে মধ্যবিত্ত celebration-এর হাওয়া উড়ে গেল। বদলে গেল ঠিকানা, লাইফস্টাইল। ফিরে পেল ইন্দ্রাণীকে। কলকাতা ছেড়ে সুমন এখন সারা দিনের ক্লান্তি কাটায় উচ্চবিত্তের বেসিনের ঝরনায়। জীবন বদলাতে লাগল, এগোতে থাকল সুমন দিবাস্বপ্ন সত্যি হওয়ার হাত ধরে।
সময়ের সাথে বদলে গেল সুমন। কিন্তু এখন এই সুমনকে চেনে না তার বাবা, মা, ইন্দ্রাণী। তৈরি হল এক সমুদ্রের ব্যবধান। ভালবাসা, একসাথে থাকা এখন শুধুই অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে।
সুমন কি ইন্দ্রাণীকে হারিয়ে ফেলবে, ভালবাসার যে জোর তাকে একদিন বাঁচিয়ে রাখত, সেটা কি শেষ হয়ে যাবে, অনেক উঁচুতে ওঠার যে স্বপ্ন সুমন দেখত, আদৌ সফল হবে নাকি সেই দিবাস্বপ্নেই সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হবে সমন? তার জন্য অবশ্যই দেখতে হবে “সর্ষেফুল” তাহলেই সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে।
ছবির পরিচালনা করেছেন সৌভিক মন্ডল। সিনেমাটোগ্রাফারের দায়িত্বে ছিলেন জয়দীপ দে, সম্পাদনা করেছেন স্বর্ণাভ চক্রবর্তী, সাউন্ড ডিজাইন করেছেন সৌম্য চ্যাটার্জী, সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন শুভদীপ গুহ। স্ক্রিপ্ট লিখেছেন অভিনন্দন দত্ত, কালারিস্ট – সৌরভ (I.C.G), প্রোডাকশন ডিজাইন করেছেন সৌভিক মন্ডল, প্রোডাকশন সহায়তা করেছেন রানা বসু ঠাকুর। প্রযোজক – সৌরভ সান্যাল ও অভিনন্দন দত্ত (Roll Camera Action)
মুখ্য চরিত্রে পৃথা ও সৌরভের অভিনয় যথেষ্ট সাবলীল। এছাড়া রানা বসু ঠাকুর সৌরভের বসের ভূমিকায় খুবই ভালো অভিনয় করেছেন। রুমকি ও কৌশিক চক্রবর্তী তাদের বাবা মায়ের চরিত্রে বেশ নিপুণতা দেখিয়েছেন। সবচেয়ে কনিষ্ঠ অভিনেত্রী অনন্যা কেও খুব সুন্দর মানিয়েছে বোনের চরিত্রে, এবং নবাগতা শিঞ্জিনী চৌধুরীও প্রথম ছবিতে সকলের নজর কেড়েছেন।
নবীন পরিচালকের দক্ষতা বোঝা যায় তার নিপুণ production ডিজাইন ও পরিচালনায়. জয়দীপ দে এর ক্যামেরার কাজ ঝকঝকে.
এই ছবি টি দেখে বহু মানুষ নিজেদের জীবনের কিছু সংগ্রামী মুহূর্ত ও হয়তো হারানো পুরোনো ভালোবাসার অভিজ্ঞতা খুঁজে পাবেন এই আশা করা যায়.