“একটু ধরুন না দাদা!”, ফের অমানবিক ব্যবহারের শিকার করোনা রোগী!
হুমড়ি খেয়ে মাটিতে বসে পড়েছেন মানুষটি। চেষ্টা করছেন কিন্তু উঠতে পারছেন না! প্রানপ্রন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তার স্ত্রী, কিছুতেই যে পারছেন না। হাসপাতাল চত্বরে অবশ্য লোক কম নেই! হাসপাতাল কর্মী, অ্যাম্বুলেন্সের চালক, বাইক আরোহী সহ অন্যান্য রোগীদের পরিজন – অনেকেইই রয়েছেন। তাদের কাছে একনাগারে কাতর অনুরোধ করে যাচ্ছেন স্ত্রী – ” দাদা একটু ধরুন না! ও দাদা, আপনার মুখে তো মাস্ক আছে একটু ধরুন না! আমি কী একা পারি?”
কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। “কোভিড রোগী”র কাছে ঘেষতে ঐআননি কেউই। দূর থেকে উপদেশ ছুড়ে দিয়েছিলেন,’ মনে জোর নিয়ে উঠে পড়ুন কাকা, উঠতে পারলেই বেচে যাবেন।’
৬৫ বছরের বৃদ্ধ আর উঠতে পারেননি। বাচাও হলনা তার। বনগাঁ মহকুমার হাসপাতালের সামনে দাড়িয়ে ছিল অ্যাম্বুলেন্স। শুধূ দরকার ছিল তুলে ধরার। কিন্তু হয়নি। স্ত্রী হাতটা টেনে অ্যাম্বুলেন্সের গায়ে ছুইয়ে বলেছিলেন,” এই যে অ্যাম্বুলেন্স, ওঠো!” কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সে ঠেস দিয়েও শেষ সম্বল হল না। আধঘন্টা পর যখন পিপিই কিট পরে ডাক্তারবাবু এলেন তখন নিস্তেজ শরীরে আর যে প্রান নেই।
শনিবার রাত সাড়ে আটটায় এমনই এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল বনখাঁ মহকুমা হাসপাতাল চত্বর। সেদিন হয়ত কেউ সাহস নিয়ে এগিয়ে এলে বৃদ্ধ প্রানে বেচে যেতেন।
সুত্রে খবর, বনগাঁর কোড়ালবাগান এলাকায় বৃদ্ধের বাড়ি। মুদিখানা দোকান চালান তিনি। শনিবার বিকেলে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, সঙ্গে জ্বর। স্ত্রীকে নিয়ে বিকেল ৫ টায় হাসপাতালে যান। হাসপাতাল সুত্রে খবর, তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। ক্রমশ অসুস্থতা বাড়লে রাত ৮ টা নাগাদ ব্যারাকপুর কোভিড হাসপাতালে রেফার করা হয়। অ্যাম্বুলেন্সও জোগাড় হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ওয়ার্ড থেকে অ্যাম্বুলেন্স অবধি পৌছানো হল না।
অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে পা বাড়িয়েছিলেন স্ত্রী। রাস্তায় যাকে দেখেছেন, অনুযোধ করেছেন,” দাদা, আমি একা পেরে উঠছি না। একটু ধরবেন!” কিন্তু কেউ কথা কানে তোলেননি। দু একজন নার্সকর্মীরা পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বললেন,” কোভিড লক্ষন আছে ওনার, ধরতে পারব না।”
বাইরে কয়েকহাত দুরে অ্যাম্বুলেন্স দাড়িয়ে! হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলেন বৃদ্ধ। স্ত্রী তাকে তোলার আপ্রান চেষ্টা করলেন। বৃদ্ধ নিজেও ওঠার চেষ্টা করলেন, কিন্তু পারলেন না। অ্যাম্বুলেন্স চালক গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে অপেক্ষা করছে। কিন্তু বৃদ্ধকে তুলতে হাত লাগালেন না।
কোভিড রোগীদের হয়রানি অবশ্য এটা প্রথম না। এর আগেও বেডের সমস্যা, অ্যাম্বুলেন্সের সমস্যা! কিন্তু এদিন বেডও ছিল, অ্যাম্বুলেন্সও ছিল। তাহলে? হসপিটালের সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো জানান,” হাসপাতাল কর্মীদের জন্য যথেষ্ট কিট মজুত আছে। একজন রোগীর এভাবে একা বেরোনো কথা নয়। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারোর দোষ প্রমানিত হলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”