৫০০ টাকায় থমকে দাড়িয়ে ভারত ফরাসি মৈত্রী সম্পর্ক
চন্দননগর মানে ফরাসিদের স্থাপত্য যা আজও ইতিহাসপ্রেমী থেকে সাধারন মানুষ সকলকেই টানে। গঙ্গার তীরবর্তী স্ট্রান্ড, যার টানে ছুটে আসে হাজার হাজার মানুষ, আর স্ট্র্যান্ডের অপরদিকে ক্লক টাওয়ার চন্দননগরের স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন। গুগলে চন্দননগর স্ট্র্যান্ড লিখে সার্চ করলে ৫ টার মধ্যে ২ টো ছবি পাবেন ক্লক টাওয়ারের। আরও জানিয়ে রাখি এই ক্লক টাওয়ার কোন নামী কোম্পানির নয়, ফরাসিদের নিজস্ব মেকানিজমে তৈরী হ্যান্ড মেড ঘড়ি ছিল এটি। গঙ্গার তীরে হাওয়া খেতে এসে এই ক্লক টাওয়ারের সময় দেখে কাটাতেন। কিন্তু মার্চ মাস থেকে দীর্ঘ লকডাউনের ফলে এই ক্লক টাওয়ারের কাটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
মাত্র পাচশো টাকার বিনিময়ে যিনি এতদিন পর্যন্ত সকালে এসে দম দিয়ে ঘড়ি চালিয়ে দিতেন, মাস গেলে জুটত মোটে পাচশত টাকা। তা অবশ্য সরকারিভাবে নয়, হেরিটেজ কমিশনের পক্ষ থেকেই পাচশো টাকার দৌলতে চলত এই দম দেওয়া ঘড়ি, চলত ওই মিস্ত্রির সংসারও। অনেকবার খারাপও হয়েছিল ঘড়িটি, কিন্তু ফের মিস্ত্রির হাতের ষ্পর্শে বছরের পর বছর ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ঘুরে চলেছে এই ঘড়ি। এই ঘড়িটি নিয়েই ছিল তার বেচে থাকা। অনুদান মাত্র ৫০০ টাকা, আর তার জন্যই রোদ ঝড় জলে টাওয়ারের উপর উঠে দম দিয়ে চালাতেন এই ঘড়ি। কিন্তু লকডাউন চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংস্থাটি অনুদান টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয় কারন বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটা ছিল ব্যয়বহুল বিষয়।
তাদের পক্ষ থেকে সরকার, পুলিশ ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করানোর চেষ্টা করা হয় এই হেরিটেজ ঘড়িটির মেইনটেনেন্স ও দম দেওয়ার জন্য মাসিক ভাতা চালু রাখতে। কিন্তু সরকার থেকে প্রশাসনের তরফ থেকে কোন উচ্চবাচ্য আসেনি। আর সেই কারনে উহ্য থেকে গেছে ঘড়ি চালানোর প্রস্তাব, ফন্ধ হয়ে গেছে ফরাসিদের রেখে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী ঘড়ি। ঘড়ি মিস্ত্রিরও আর্থিক অবস্থা খারাপ, এখন কেউই তার কাছে ঘড়ি সারাতে আসে না। একটা সময় ছাল যখন এই নামকরা ঘড়ি মিস্ত্রির হাতেই সচল হয়েছিল প্রাচীন ঘড়ির কাটা। আর শেষ সম্বল ছিল ক্লক টাওয়ার। এই ঘড়িটির প্রতি তার মায়া পড়ে গিয়েছিল। তাই মাত্র ৫০০ টাকার বিনিময়ে সন্তানস্নেহে ঘড়িটির দম ও মেইনটেনেন্স করতেন।
বন্ধ হয়ে গিয়েছে মাসো হারা, বন্ধ হয়ে গিয়েছে ক্লক টাওয়ারের দরজা। প্রতিদিন স্ট্র্যান্ডে এসে নিরুপায়ভাবে ঘড়িটির দিকে তাকিয়ে চলে যান মিউজিয়ামের বাগানের ঘাস কাটতে। ঐতিহ্যবাহী ফরাসি নিদর্শন এই ঘড়িটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন জনগনও। এতদিন সন্তানস্নেহে লালন পাড়ন করা ঘড়ি মিস্ত্রির হাতে উঠেছে আজ ঘাস কাটার কাটারি। এই মেশিনের ভবিষ্যৎ অবশেষে কী হবে তা এখন সময়ই বলবে।